Header Ads Widget

Responsive Advertisement

যেভাবে ৪৪ ঘণ্টা সাগরে ভেসেছিলেন ১১ জেলে !

ছবি সংগৃহীত
সাগরে বাতাস বইতে শুরু করলে ফিশিং ট্রলারের তলা ফেটে পানি ঢুকতে শুরু করে। তারা অবিলম্বে কর্কের চাদর এবং ভাসমান দড়ি দিয়ে বেঁধে ছয়টি বয় তৈরি করে। ছয়জন লোক কোমরে ছয়টি বয়া বেঁধেছে। তারপর একটি দড়ি দিয়ে ছয়টি বয় একসাথে বেঁধে দিন। পরে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে ট্রলারের বাকি ছয় জেলেকে আটক করা হয়। এভাবে তারা প্রায় ৪৪ ঘণ্টা সাগরে ভাসতে থাকে। কখন যে দিন রাত পার হয়ে
গেল তারা বুঝতেই পারেনি। পরে আরেকটি ট্রলার তুলে নেয়।

উদ্ধার হওয়া জেলে নুর মুহাম্মদ (৪২) বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার জাহাজ ডুবির ৪৪ ঘণ্টা পর একটি চাঞ্চল্যকর উচ্ছ্বাস প্রতিবেদন দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে নৌকাসহ ১২ জেলে পানিতে ডুবে মারা যায়। পরে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে তাদের ১১ জনকে উদ্ধার করা হয়। অপরজন এখনো নিখোঁজ।


ছবি সংগৃহীত

উদ্ধারকৃত জেলেরা হলেন নৌযানের ক্রু মুহাম্মদ মুখতার, আখতার হুসেন, নুর মুহাম্মদ, মেরিল্যান্ড। ফ্রেড, ডাক্তার। ইলিয়াস, এমডি. আরাফাত, এমডি মো. শাহীন, এমডি মো. উসমান, এমডি। আজিজ-উল-হক, মেরিল্যান্ড। আরিফ ও মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর। নিখোঁজ জেলের নাম নুরউদ্দিন। তাদের সবার বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে। শুক্রবার দুপুরে এ ইউনিয়ন থেকে জাহরার পূর্ব ঘাটকুল মোলাপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, জেলেদের ফিরে আসা স্বজনদের মাঝে ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে।


উদ্ধারকারী জেলে মোহাম্মদ আক্তার, 45 বছর বয়সী, “সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে পটকা মাছটি কামড়াতে শুরু করে। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি। এক পর্যায়ে আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের দেখার আশা ছেড়ে দিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম। কখন যে রাত-দিন কেটে গেছে বুঝতেই পারিনি কিন্তু এত বিপদেও আমরা একে অপরকে ত্যাগ করিনি। বেঁচে থাকলে একসঙ্গেই বাঁচতাম, মরে গেলেও একপর্যায়ে আমাদের বারোজনের মধ্যে দুজন পালিয়ে যায়, এবং তিনি জানান, সাগরে ভাসতে ভাসতে একপর্যায়ে মাছ ধরার ট্রলারটি পাচু ম্যাগি বোলা ১০টি তুলে নিয়ে পটিঙ্গা জেলার কাঠগড়ে ফেলে দেয়।


হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেও তরুণ শিকারীর চোখে ভয় ছিল। আরাফাত (24)। তিনি বলেন, অনেকক্ষণ পানিতে ভাসানোর পর এক পর্যায়ে তার মনে হয়, সে তার বাবা-মায়ের মুখ দেখতে পাবে না। কিন্তু তার সাথে থাকা শিকারীরা তাকে অনেক সাহস দিয়েছে। তিনি বললেনঃ আমি মৃত্যু পর্যন্ত বেঁচে ছিলাম। সমুদ্রের সেই সময়টার কথা মনে পড়লে এখনো কেঁপে উঠি। বুলার জেলেরা বৃহস্পতিবার মাছ ধরতে আমাদের সমুদ্রে ভাসতে দেখেছে। তারা আমাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রামে নিয়ে যায়।


ছেলেকে উদ্ধারের বিষয়ে আরাফাতের বাবা নুর আল-হক বলেন, মঙ্গলবার মাছ ধরার নৌকা ডুবির দুদিন পর তিনি ছেলের আশা হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ আমার বুকের ধন ফিরিয়ে দিয়েছেন। এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।


আবদ আল-রহিম ডুবে যাওয়া জাহাজের মালিক মুনির আল-দীনের পক্ষে জাহাজটির তত্ত্বাবধান করেন। "ট্রলারটি ডুবে গেছে," তিনি বলেন, "আমি কষ্টের চেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম, যখন আমি 12 জন জেলেকে গণনা করেছি।" একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে। ট্রলার ডুবির পর একের পর এক লাশের ছবি ফেরত পাঠায় নৌবাহিনী। নির্ধারণ করুন, তারা জনপ্রিয় নয়। এই ভয়ঙ্কর দিনগুলো কেটে গেছে।


স্থানীয় সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনোয়ারা উপকূল থেকে "এফবি মালিক শাহ", "এফবি আল্লাহ দান" এবং "এফবি আলী শাহ" নামে তিনটি মাছ ধরার জাহাজ বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে। ওই জাহাজ থেকে 40 জন জেলেদের মধ্যে 28 জনকে উদ্ধার করা হলেও এফবি আলী শাহ মাছ ধরার জাহাজে থাকা 12 জেলে নিখোঁজ রয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে গতকাল বিকেলে ভোলার বাচ্চু মাঝি ট্রলারে ও অপর একজনকে অন্য ট্রলারে করে সাগরে সাঁতার কাটতে গিয়ে উদ্ধার করা হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ